একটি p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর ও একটি n-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর সমন্বয়ে p-n জংশন তৈরি হয়। দুটি সেমিকন্ডাক্টর সমন্বয়ে গঠিত বলে একে সেমিকন্ডাক্টর ডায়োড বলে। এই জংশন তড়িৎপ্রবাহ একদিকে প্রবাহিত করে বা একমুখী করে, তাই এর অপর নাম সেমিকন্ডাক্টর রেকটিফায়ার। প্রকৃতপক্ষে দুটি সেমিকন্ডাক্টরকে জোড়া লাগিয়ে ডায়োড তৈরি করা হয় না। একটি বিশুদ্ধ সেমিকন্ডাক্টর কেলাসকে এমনভাবে ডোপায়ন করা হয় যাতে একদিকে p-টাইপ ও অন্যদিকে n-টাইপ অঞ্চলের উদ্ভব হয় এবং মাঝে একটা জংশন তৈরি হয়। p-টাইপ ও n-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের স্পর্শতলকে জংশন বা সংযোগ তল বলে। ডায়োডের বর্তনী প্রতীক হচ্ছে এবং ব্লক চিত্র হচ্ছে [p[n]। একটি - p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের অভ্যন্তরে বহুসংখ্যক হোল ও অতি অল্পসংখ্যক ইলেকট্রন থাকে। হোলের সংখ্যা কেলাসের মধ্যে ঋণাত্মক আয়নিত গ্রাহক পরমাণুর সমান। একইভাবে একটি -টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের মধ্যে বহুসংখ্যক মুক্ত ইলেকট্রন এবং অতি অল্পসংখ্যক হোল থাকে এবং ঐ মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা কেলাসের মধ্যকার ধনাত্মক আয়নিত দাতা পরমাণুর সমান ।
p-n জংশন সৃষ্টির সাথে সাথে p-অঞ্চলে হোলের সংখ্যা n-অঞ্চলের হোলের সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি বলে ব্যাপনের নিয়ম অনুযায়ী p-অঞ্চলের হোলগুলো n-অঞ্চলে যেতে চেষ্টা করে যাতে p ও n অঞ্চলের সর্বত্র হোলের সংখ্যা ঘনত্ব সমান হয়। একইভাবে n অঞ্চল থেকে কিছু ইলেকট্রন p-অঞ্চলে যেতে চেষ্টা করে।
p-অঞ্চল হতে হোলগুলো n-অঞ্চলে প্রবেশ করে n-অঞ্চলের মুক্ত ইলেকট্রনের সাথে মিলিত হয়ে তড়িৎ নিরপেক্ষ হয় ফলে সমসংখ্যক ধনাত্মক দাতা আয়ন উন্মুক্ত হয়। আবার -অঞ্চল হতে একই প্রক্রিয়ায় মুক্ত ইলেকট্রনগুলো p- অঞ্চলে প্রবেশ করে সেখানকার হোলের সাথে মিলিত হয়ে তড়িৎ নিরপেক্ষ হয় এবং সমসংখ্যক ঋণাত্মক গ্রাহক আয়ন উন্মুক্ত করে। ফলে p-অঞ্চলে কিছু ঋণাত্মক আয়ন এবং n-অঞ্চলে কিছু ধনাত্মক আয়নের উদ্ভব হয় (চিত্র : ১০.১২)। এভাবে যথেষ্ট সংখ্যক গ্রাহক ও দাতা আয়ন উক্ত হওয়ার পর ব্যাপন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। এখন n- অঞ্চলের ধনাত্মক আধান p-অঞ্চল থেকে হোলের আগমন এবং p অঞ্চলের ঋণাত্মক আধান n অঞ্চল থেকে ইলেকট্রনের আগমনকে বাধা দেবে। ফলে সংযোগস্থলে একটা বিভব প্রাচীরের উদ্ভব হবে যা বিভব বাধা সৃষ্টি করবে। এই বিভব বাধার বাইরে উভয়দিকে কেলাস তড়িৎ নিরপেক্ষ অবস্থায় থাকে। শুধু বিভব বাধা অংশে ” অঞ্চলে ধনাত্মক আয়ন এবং p-অঞ্চলে ঋণাত্মক আয়ন দেখা যায়। p-n জংশনের এ অংশকে মুক্ত আধানহীন স্তর বা নিঃশেষিত স্তর বা ডিপলেশন স্তর বলে।
এখন p-n জংশনে বহিস্থ ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হলে তড়িৎ প্রবাহ হবে। তবে সেটা নির্ভর করবে ভোল্টেজ কীভাবে প্রয়োগ করা হবে তার ওপর। p-n জংশনে বহিস্থ ভোল্টেজ-এর প্রয়োগ দুভাবে হতে পারে। যথা-
p-n জংশনে যদি কোনো বহিস্থ ভোল্টেজ বা বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করা হয় তাহলে তড়িৎপ্রবাহ ঘটে। ভোল্টেজ যদি এমনভাবে প্রয়োগ করা হয় যে কোষের ধনাত্মক প্রাপ্ত p-টাইপ বস্তুর সাথে এবং ঋণাত্মক প্রাপ্ত -টাইপ বস্তুর সাথে সংযুক্ত হয় তাহলে তাকে সম্মুখী ঝোঁক বলে (চিত্র ১০.১৩)। এক্ষেত্রে কোষের ধনাত্মক প্রাপ্ত ইলেকট্রনগুলোকে বামে অর্থাৎ p-টাইপ বস্তুর দিকে এবং কোষের ঋণাত্মক প্রান্ত হোলগুলোকে ডানে অর্থাৎ -টাইপ বস্তুর দিকে টানবে। ফলে n-টাইপ বস্তু থেকে ইলেকট্রন জংশন পার হয়ে p টাইপ বস্তুতে যাবে এবং হোল জংশন পার হয়ে n-টাইপ বস্তুতে প্রবেশ করবে। ব্যাপারটি এরকম যে n-টাইপ বস্তু থেকে ইলেকট্রন জংশন পার হয়ে p-টাইপ বস্তুতে গিয়ে এর হোলগুলো পূর্ণ করবে। ফলে p-n জংশন ও বহিস্থ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ চলবে। এই প্রবাহকে বলা হয় সম্মুখী প্রবাহ। এই ধরনের সংযোগকে বলা হয় সম্মুখী ঝোঁক।
এক্ষেত্রে n-টাইপ বন্ধুর মুক্ত ইলেকট্রন ব্যাটারির ধনাত্মক প্রাপ্তের আকর্ষণের ফলে n-টাইপ ৰঙ্কুতেই থেকে যাবে p জংশন পার হয়ে কিছুতেই p টাইপ বন্ধুতে যেতে পারবে না। p-টাইপ বস্তুর 'হোল'ও p-টাইপ বস্তুতেই থেকে যাবে। ফলে ডিপলেশন স্তরের প্রশস্ততা বৃদ্ধি পাবে এবং জংশন দিয়ে কোনো তড়িৎপ্রবাহ চলবেনা। এ ধরনের সংযোগকে বলা হয় বিমুখী ঝোঁক।
উপরিউক্ত ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, ডোস্টেজ প্রয়োগ করা হলে p-n জংশন শুধু ইলেকট্রন এক অভিমুখে প্রবাহের অনুমতি দেয়। অর্থাৎ এই জংশনে ইলেকট্রনের প্রবাহ একমুখী। সুতরাং এটি রেকটিফায়ার হিসেবে কাজ করে। তাই সেমিকন্ডাক্টরকে ডায়োড রেকটিফায়ার বলে।
আরও দেখুন...